Monday, 18 November 2024

বানানরীতি লেখার নিয়ম

 ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং মর্যাদাপূর্ণ সুযোগ। এই পরীক্ষায় কেবলমাত্র মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়, যেখানে বাংলা ভাষার সঠিক জ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাংলা ভাষার সঠিক বানান জ্ঞান পরীক্ষার্থীর ভাষা দক্ষতা এবং ব্যাকরণের উপর দখল প্রদর্শন করে। বানান শুধুমাত্র শুদ্ধ লেখার একটি অংশ নয়, এটি শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা ও উপস্থাপন দক্ষতার পরিচায়ক। তাই, বানান জ্ঞানের অভাব পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বানান বলতে বোঝায় একটি শব্দের সঠিক ধ্বনি, উচ্চারণ এবং বর্ণমালার সঠিক ক্রমানুসারে লিখনপদ্ধতি। এটি ভাষার সঠিক প্রয়োগ ও শুদ্ধতা বজায় রাখতে অপরিহার্য।

বানান হলো বুঝিয়ে বলা। লিখিত ভাষায় এই বলা স্বরবর্ণের পর স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণের পর ব্যঞ্জনবর্ণ অথবা স্বরবর্ণের পর ব্যঞ্জনবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের পর স্বরবর্ণ যোগ করাকে বোঝায়।

বানান শিখতে বা লিখতে গেলে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পরিপূর্ণভাবে ধ্বনি অনুযায়ী বানান লেখার নিয়ম বিশ্বের কোনো ভাষায় নেই। ধ্বনিতত্ত্ব অংশে আমরা দেখেছি যে, আমাদের ভাষায় সব বর্ণ সব ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু সব বর্ণই আমাদের লিখনপদ্ধতির আশ্রয়।

বানানরীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা

বাংলা বানানরীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভাষার সঠিক ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনতে এবং যোগাযোগকে সহজ ও কার্যকর করতে সাহায্য করে। নিচে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো:

 

১. সঠিক যোগাযোগ নিশ্চিতকরণ

 

সঠিক বানান ব্যবহারের মাধ্যমে লেখা বা কথার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝানো সম্ভব।

ভুল বানান অর্থের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

 

২. ভাষার সৌন্দর্য রক্ষা

 

প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ করলে ভাষার শৈলী ও সৌন্দর্য বজায় থাকে।

এটি লেখার মান বৃদ্ধি করে।

 

৩. একীভূত ভাষা গঠন

 

বানানরীতি একটি ভাষার অভিন্ন রূপ তৈরি করে, যা দেশের সব অঞ্চলে গ্রহণযোগ্য হয়।

আঞ্চলিক পার্থক্যের কারণে উচ্চারণে ভিন্নতা থাকলেও প্রমিত বানানরীতি সবার জন্য সমান।

 

৪. শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে সহায়ক

 

শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে বানানরীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভুল বানান শিখলে তা ভবিষ্যতে লেখালেখিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

 

৫. পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতায় সফলতা

 

সঠিক বানান শিখলে একাডেমিক পরীক্ষায় এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করা সহজ হয়।

বিশেষ করে ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রমিত বানানরীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

 

৬. ভাষার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা বাংলা ভাষার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঠিক চর্চার জন্য বানানরীতি মেনে চলা জরুরি।

 

এটি ভাষার গৌরব ও মর্যাদা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

৭. অভিধানের সঠিক ব্যবহার

 

বানানরীতি জানলে অভিধান থেকে শব্দ খুঁজে বের করা সহজ হয়।

এটি শব্দার্থ ও বাক্যগঠন শেখার প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

 

৮. ভুল থেকে বাঁচার জন্য

 

সঠিক বানান শেখার ফলে লেখায় ভুল কম হয় এবং এর ফলে পাঠক বা শ্রোতার কাছে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।

 

বানানরীতি  লেখার নিয়ম

 

. উপসর্গ প্রত্যয়ের সঠিক প্রয়োগ

 

শব্দে উপসর্গ বা প্রত্যয় যোগ করলে বানানের শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে।

উদাহরণ:

উপসর্গ: +শিক্ষাঅশিক্ষা

প্রত্যয়: জানা + তেজানতে

. সমার্থক শব্দের শুদ্ধ বানান

 

একই শব্দের ভিন্ন রূপের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

উদাহরণ:

মূর্খ (শুদ্ধ) → অজ্ঞ (সমার্থক)

মলিন (শুদ্ধ) → অনুজ্জ্বল (সমার্থক)


. '' 'ড়' এর পার্থক্য

 

 এবংড়’-এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

উদাহরণ:

ভুল: বোরোশুদ্ধ: বড়ো

ভুল: বাড়ীশুদ্ধ: বাড়ি

 

. ইংরেজি শব্দের বাংলা বানান

 

ইংরেজি শব্দের বাংলা রূপান্তরে উচ্চারণের কাছাকাছি বানান ব্যবহার করতে হবে।

উদাহরণ:

ভুল: টেলিভিসনশুদ্ধ: টেলিভিশন

 

. বাংলা একাডেমির নিয়ম মেনে লেখা

বাংলা একাডেমির বানান অভিধান অনুসারে বানান শিখতে হবে।

 

. রেফ (-ফলা) এর ব্যবহার

যদি ব্যঞ্জনধ্বনির আগে থাকে, তবে রেফ ব্যবহার করতে হয়।

উদাহরণ: মর্ম, গর্ভ

 

. অনুস্বার () এর ব্যবহার

 

অনুস্বার সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণের আগে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ: বাংলা, গঙ্গা, মঙ্গল

. যুক্তাক্ষর ব্যবহার

 

দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে একত্রে একটি নতুন ধ্বনি তৈরি করলে যুক্তাক্ষর হয়।

উদাহরণ: শিক্ষা, দীক্ষা, শক্তি

 

১০. দীর্ঘ হ্রস্ব স্বরধ্বনি

 

স্বরবর্ণের দীর্ঘতা বা হ্রস্বতার ওপর ভিত্তি করে বানান ঠিক করতে হয়।

উদাহরণ:

ভুল: দির্ঘশুদ্ধ: দীর্ঘ

ভুল: ঊষাশুদ্ধ: ঊষা

 

১১. বিশেষ চিহ্নের ব্যবহার

 

হ্রস্ব -কার: এটি কিছু শব্দে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে।

উদাহরণ: বই, দই

দীর্ঘ -কার: অন্য শব্দের মধ্যে পার্থক্য করে।

উদাহরণ: শিক্ষা, দীক্ষা

 

১২. বিশেষ ধ্বনি পরিবর্তন

 

কিছু শব্দের উচ্চারণে ধ্বনি পরিবর্তিত হলেও বানান অপরিবর্তিত থাকে।

উদাহরণ:

ভুল: শিক্খাশুদ্ধ: শিক্ষা

ভুল: লক্খ্যশুদ্ধ: লক্ষ্য

 

১৩. ব্যঞ্জনবর্ণের পরে 'হসন্ত' ব্যবহার

 

যেসব ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণে স্বরবর্ণ যোগ হয় না, সেখানে হসন্ত চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ: দণ্ড, ব্রহ্ম

১৪. হ্রস্ব দীর্ঘ -কারের ব্যবহার

 

এবংবর্ণের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।

উদাহরণ:

ভুল: বুধশুদ্ধ: বুধ

ভুল: ঊর্ধ্বশুদ্ধ: ঊর্ধ্ব

 

১৫. শব্দে অন্তঃস্থ 'য়' এর ব্যবহার

 

কিছু শব্দে 'য়' চিহ্ন ব্যবহার হয়।

উদাহরণ:

ভুল: মাধবশুদ্ধ: মাধ্যব

ভুল: ধ্রুবতারাশুদ্ধ: ধ্রুবতারা

 

১৬. স্বরবর্ণের লোপের নিয়ম

 

কিছু শব্দে স্বরবর্ণ উচ্চারণে বাদ পড়লেও বানানে থাকতে হবে।

উদাহরণ:

ভুল: হোস্টেলশুদ্ধ: হস্টেল

ভুল: প্লেনশুদ্ধ: বিমান

 

১৭. তদ্ভব শব্দের নিয়ম

 

তৎসম শব্দ থেকে পরিবর্তিত হয়ে তদ্ভব শব্দ তৈরি হয়। এগুলো উচ্চারণের ভিত্তিতে সহজ হয়।

উদাহরণ:

তৎসম: অগ্নিতদ্ভব: আগুন

তৎসম: মুকুটতদ্ভব: মুকুট

 

 

১৮. দেশি শব্দের নিয়ম

 

দেশি শব্দে সাধারণত উচ্চারণের মতো বানান করা হয়।

উদাহরণ:

ভুল: চান্দেশুদ্ধ: চাঁদে

ভুল: লেংটাশুদ্ধ: ল্যাংটা

 

১৯. বিদেশি শব্দের নিয়ম

 

বিদেশি শব্দগুলোর প্রচলিত রূপে বানান করা হয়।

উদাহরণ:

ভুল: আফিস শুদ্ধ: অফিস

ভুল: টেলিভিসন শুদ্ধ: টেলিভিশন

 

২০. ‘ণ’ এবং ‘ন’-এর ব্যবহার

কিছু শব্দে ‘ণ’ এবং কিছু শব্দে ‘ন’ ব্যবহার হয়।

উদাহরণ:

ভুল: জীবন → শুদ্ধ: জীবন

ভুল: কর্ণ → শুদ্ধ: কর্ণ




ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে হলে বানান শিক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। শুদ্ধ বানান শুধু পরীক্ষার ভালো ফলাফলেই সহায়ক নয়, এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের যোগাযোগ দক্ষতাও উন্নত করে। সঠিক বানান ভাষার সৌন্দর্য ও মর্যাদা অটুট রাখে এবং পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। তাই, প্রাথমিক স্তর থেকেই বানানের গুরুত্ব বুঝে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে এই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।


 

 

 

 

 

Wednesday, 13 November 2024

আমাদের লোকশিল্প


ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এতে কেবল ভাষাগত জ্ঞান নয়, বরং সাহিত্য সম্পর্কে গভীর অনুধাবন, বোধশক্তি এবং সৃজনশীলতাও মূল্যায়িত হয়। "আমাদের লোকশিল্প" পাঠটি শিক্ষার্থীদের বাংলার লোকজ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার একটি পরিচয় দেয়। এ পাঠে লোকশিল্পের বিভিন্ন রূপ, বৈশিষ্ট্য এবং বাংলার সংস্কৃতির সাথে তার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে সহায়ক। পরীক্ষায় এই পাঠ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাংলার সাংস্কৃতিক জ্ঞান এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা যাচাই করা যায়, যা ভবিষ্যতে তাদের সমাজ সচেতন নাগরিক হতে সহায়তা করবে।

 

 

ছোট প্রশ্ন ও উত্তর:


১. লোকশিল্প কী?
উত্তর: লোকশিল্প হলো সেই শিল্প যা সাধারণ জনগণের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

২. বাংলার লোকশিল্পের কত প্রকার?
উত্তর: বাংলার লোকশিল্প প্রধানত মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, বস্ত্রশিল্প, নকশিকাঁথা এবং পটচিত্র সহ বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত।

৩. পটচিত্র কী?
উত্তর: পটচিত্র হলো এক ধরনের চিত্রশিল্প যা সাধারণত কাপড় বা কাগজে আঁকা হয় এবং এর মাধ্যমে গল্প বলা হয়।

৪. মাটির তৈরি খেলনাগুলোর ব্যবহার কোথায় বেশি দেখা যায়?
উত্তর: মাটির তৈরি খেলনাগুলোর ব্যবহার বাংলার গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে শিশুদের খেলাধুলায়।

৫. নকশিকাঁথা কেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: নকশিকাঁথা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প যা সৌন্দর্য, শৈল্পিকতা ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে।

৬. জামদানি শাড়ির উৎপত্তিস্থান কোথায়?
উত্তর: জামদানি শাড়ির উৎপত্তিস্থান ঢাকার নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে।

৭. বাংলার কোন জায়গাগুলোতে পিতলের তৈরি সামগ্রীর প্রচলন বেশি?
উত্তর: বাংলার কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল অঞ্চলে পিতলের তৈরি সামগ্রীর প্রচলন বেশি।

৮. বাউল গানের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: বাউল গানের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আধ্যাত্মিক ও মানবতাবাদী আদর্শে পরিপূর্ণ, যা মূলত ভক্তিমূলক।

৯. বাংলার মেলাগুলোতে কোন ধরনের লোকশিল্প দেখা যায়?
উত্তর: বাংলার মেলাগুলোতে মৃৎশিল্প, পাটের সামগ্রী, বাঁশের সামগ্রী, পুতুল, নকশিকাঁথা ইত্যাদি লোকশিল্প দেখা যায়।

১০. কোন ধরনের কাজকে 'কারুশিল্প' বলা হয়?
উত্তর: যে সব কাজে হাতের দক্ষতা, নকশা ও সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়, তাকে কারুশিল্প বলা হয়।

১১. গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত কাঁথার বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত কাঁথার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি নকশায় সুসজ্জিত ও ঐতিহ্যবাহী।

১২. মাটির তৈরি খেলনা কিভাবে বানানো হয়?
উত্তর: মাটির তৈরি খেলনা সাধারণত মাটি মন্ড করে নির্দিষ্ট আকারে তৈরি করা হয় এবং তারপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়।


বড় প্রশ্ন ও উত্তর:


১. লোকশিল্পের সাথে বাংলার সংস্কৃতির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লোকশিল্প বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বাংলার গ্রামীণ জীবন, উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং স্থানীয় জীবনের প্রতিফলন ঘটে।

২. লোকশিল্পের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করো।
উত্তর: লোকশিল্প প্রধানত মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, পটচিত্র, বস্ত্রশিল্প, নকশিকাঁথা প্রভৃতিতে বিভক্ত। মৃৎশিল্পে মাটি দিয়ে তৈরি পাত্র ও খেলনা, পটচিত্রে কাপড় বা কাগজে আঁকা চিত্রকর্ম, এবং বস্ত্রশিল্পে নকশিকাঁথা ও জামদানির মতো ঐতিহ্যবাহী শাড়ি অন্তর্ভুক্ত।

৩. পটচিত্র ও তার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করো।
উত্তর: পটচিত্র বাংলার প্রাচীন এক শিল্পকর্ম যা গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি সাধারণত কাহিনির আকারে আঁকা হয় এবং উৎসব-মেলা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়, যা লোকজ সংস্কৃতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা জাগায়।

৪. বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত মৃৎশিল্পের গুরুত্ব কী?
উত্তর: বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মৃৎশিল্পের মাধ্যমে মাটির তৈরি পাত্র, খেলনা ও মূর্তি তৈরি করা হয়। এটি বাংলার অর্থনীতিতে অবদান রাখে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির ধারক হিসেবে কাজ করে।

৫. নকশিকাঁথার বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করো।
উত্তর: নকশিকাঁথা হলো হাতে তৈরি সূচিকর্ম যা বেডকভার, আসন ও শীতলপাটির কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি নান্দনিক নকশা ও দক্ষতাপূর্ণ সেলাইয়ের জন্য বিখ্যাত।

৬. জামদানি শাড়ি কিভাবে তৈরি হয়? এর বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করো।
উত্তর: জামদানি শাড়ি মূলত হাতে তৈরি এবং এর ডিজাইন ও বুননের কৌশল অত্যন্ত জটিল। এটি সাধারণত পাতলা কাপড়ে সুতার কাজ করা হয়, যা একটি উচ্চমানের শৈল্পিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।

৭. বাউল গান ও লোকগানের সাথে বাংলার ইতিহাসের সম্পর্ক আলোচনা করো।
উত্তর: বাউল গান ও লোকগানের মাধ্যমে বাংলার আধ্যাত্মিক, সমাজসচেতন এবং মানবিক ভাবধারার প্রতিফলন ঘটে। এটি বাংলার গ্রামীণ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

৮. বাংলার মেলা ও মেলার সাথে সম্পর্কিত লোকশিল্পের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলার মেলাগুলোতে লোকশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শিত হয় যা স্থানীয় অর্থনীতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। এটি মানুষের মিলনস্থল এবং ঐতিহ্যের ধারক।

৯. পিতল শিল্প বাংলার কোন কোন অঞ্চলে কিভাবে প্রসার লাভ করেছে?
উত্তর: পিতল শিল্প বাংলার কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছে, যেখানে মন্দির, পূজার সামগ্রী ও গৃহস্থালির কাজে পিতলের সামগ্রী ব্যবহৃত হয়।

১০. লোকশিল্প বাংলার অর্থনীতিতে কীভাবে অবদান রাখে?
উত্তর: লোকশিল্প বাংলার অর্থনীতিতে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং দেশীয় পণ্য তৈরির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।


 

নিচে আরও কিছু শূন্যস্থান দেওয়া হলো:

 

. বাংলার লোকশিল্প __ বৈচিত্র্যময়। (প্রাচীন)

. নকশিকাঁথা তৈরির জন্য সাধারণত __ কাপড় ব্যবহার করা হয়। (পুরানো)

. বাউল গান __ ধারা হিসাবে পরিচিত। (লোকসংগীত)

. জামদানি শাড়ির নকশাগুলো __ কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। (বুননের)

. বাংলার মৃৎশিল্প বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ __ জিনিসপত্রের জন্য। (খেলনা)

. পটচিত্র শিল্পী সাধারণত __ গল্প বর্ণনা করতে ব্যবহার করেন। (ধর্মীয় বা লোকগল্প)

. মেলাগুলোতে পিতল __ সামগ্রী বিক্রি করা হয়। (মাটির)

. নকশিকাঁথা জামদানিকে বাংলার __ বলে অভিহিত করা হয়। (ঐতিহ্য)

. গ্রামাঞ্চলের মেলাগুলোতে লোকশিল্পের সাথে __ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। (সংস্কৃতির)

১০. বাংলার লোকশিল্প আমাদের __ জীবনের প্রতিফলন। (গ্রামীণ)

 

শব্দার্থ (১২টি):


১. লোকশিল্প – জনগণের তৈরি শিল্পকর্ম
২. মৃৎশিল্প – মাটির তৈরি শিল্প
৩. নকশিকাঁথা – হাতে তৈরি নকশাযুক্ত কাঁথা
৪. পটচিত্র – চিত্রকলার একটি প্রাচীন রূপ
৫. কারুশিল্প – হাতের কারুকার্যযুক্ত শিল্পকর্ম

 

 

 

ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় "আমাদের লোকশিল্প" সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের শুধু সাধারণ জ্ঞানের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর মাধ্যমে তারা লোকজ সংস্কৃতির মূল্য এবং গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। এসব প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হবে এবং তাদের সৃজনশীল ও চিন্তাশক্তি আরও বিকশিত হবে। তাই, লোকশিল্প সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য সহায়ক।